ছাত্রদলের বিপর্যয়ের কারণ খুঁজছে বিএনপি

commentaires · 11 Vues

ডাকসুর পর জাকসু নির্বাচনেও ছাত্রদলের ধারাবাহিক বিপর্যয় বিএনপি হাইকমান্ডের মধ্যে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে?

ডাকসুর পর জাকসু নির্বাচনেও ছাত্রদলের ধারাবাহিক বিপর্যয় বিএনপি হাইকমান্ডের মধ্যে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এক সময়ের অপ্রতিরোধ্য ছাত্র সংগঠনটির এমন দুর্বল হয়ে পড়া এবং শিক্ষার্থীদের সমর্থন হারানোর কারণগুলো অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করতে দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন দলের শীর্য পর্যায়ের নেতারা।

এই অপ্রত্যাশিত হারে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন তারা।

 

এই পরাজয়ের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না বিএনপি। যদিও অনেক প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনে কারচুপি এবং ফলাফল প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছে। দলের একাধিক শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই পরিস্থিতিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে তথ্য সংগ্রহ করে ৯ সেপ্টেম্বর রাতেই স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তবে তারা মনে করছেন, প্রতিপক্ষের চতুর কৌশলই মূলত এই শোচনীয় পরাজয়ের পেছনে দায়ী। এছাড়া নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতাকেও এ পরাজয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তারা।

যদিও প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে দেওয়া এক বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় পর নির্বাচন হওয়ায় কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল, তবুও তিনি বিজয়ীদের ওই বক্তব্যের মাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। এটাকেই তিনি গণতন্ত্র বলে আখ্যাও দেন। অন্যদিকে, বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেছেন, ছাত্রলীগের সঙ্গে আঁতাত করেই ডাকসুতে বিজয়ী হয়েছে ছাত্রশিবির।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, গত বছর ৫ আগস্টের পর গত এক বছরে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের ছায়া এবং দলীয় লেজুরবৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির প্রভাবের কারণে এই নির্বাচনে ছাত্রদলের পতন হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ বিভাজন, গ্রুপিং এবং সমন্বয়ের অভাবকেও তারা এই পরাজয়ের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা আরও বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্রদলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সামনে এসেছে। অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী মনে করেছেন, ছাত্রদলের আচরণ আগের ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মতোই হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া ছাত্রদল জিতলে পুরনো কায়দার রাজনীতি ফিরে আসার আশঙ্কা থাকায় অনেকে ভোট দিতে দ্বিধা করেছেন বলে মনে করছেন তারা।

যদিও এসব অভিযোগ সরাসরি খারিজ বা গ্রহণ কোনোটাই করতে পারছেন না ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। তবুও এমন ফলাফল কেন হলো তা আমরা যাচাই ও বিশ্লেষণের চেষ্টা করছি। এর পেছনের কারণগুলোও আমরা খতিয়ে দেখছি। আশা করছি, শিগগিরই এই মূল্যায়ন সম্পন্ন করে আমরা দুর্বলতাগুলো দূর করতে সক্ষম হবো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের মাইন্ডসেট সঠিকভাবে বুঝতে পারেনি। ৫ আগস্টে স্বৈরাচার পতনের পর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা আর কারো চোখরাঙানি মেনে নিতে রাজি ছিলেন না। আর শিবির যেভাবে সাইবার কৌশলের জন্য প্রস্তুত ছিল, ছাত্রদল তার তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে ছিল বলে মনে করেন তারা।

এছাড়া অতীতেও ছাত্রদলের কিছু বিতর্কিত ইতিহাস রয়েছে, আর গত এক বছরে চাঁদাবাজি ও ধর্ষণের খবরও এসেছে তাদের বিরুদ্ধে। এসব কারণেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদের প্রতি আকর্ষণ কম ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে কিছু শিক্ষার্থী মনে করছেন, ছাত্রদলের এই পরাজয়ে বিএনপির তৃণমূলের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছাত্রদল, যুবদল বা বিএনপি নেতাকর্মীদের নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রভাব ঢাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়েছে, যার ফলে ভোটসংখ্যা কমে গেছে বলে তারা মনে করছেন।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভরাডুবির প্রধান কারণগুলো ছিলো- হল কমিটি ভাঙা-গড়া, হল কমিটির প্রার্থীদের পরিচিতি কম থাকা, বিএনপির মাত্র একজন নেতার মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে প্রার্থী তালিকা তৈরি করা এবং সাবেক ছাত্রনেতা ও বিএনপিপন্থি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব।

এছাড়া তারা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিক যোগাযোগের অভাবও ছাত্রদলের দুর্বলতার বড় একটি কারণ। অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং ও কোন্দলের কারণে প্যানেলের একজন সদস্যও নির্বাচনে জয়ী হতে পারেনি। অল্প সময়ে প্যানেল গঠনের ফলে বিভিন্ন গ্রুপকে এক প্ল্যাটফর্মে আনা যায়নি এবং দলের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কার্যকরভাবে পাশে টানা সম্ভব হয়নি। নেতারা বলেন, শুধুমাত্র প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ইমেজের ওপর নির্ভর করেই ভোটে অংশ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষক, নারী ভোটার ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগও ছিল অত্যন্ত সীমিত।

অন্যদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কিছু কর্মকর্তার সরাসরি যুক্তি ছিলেন, যাদের কেউ কেউ জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, আবার কেউ কেউ আওয়ামীপন্থী। শিক্ষক ও প্রশাসকরা সবাই মিলে কাজ করার কারণে ছাত্রদলের বিপর্যয় হয়েছে। হয়তো সাংগঠনিক ছাত্রদলের দূরদৃষ্টি কিছুটা কম ছিল, পরিস্থিতি কী হবে, তা তারা গভীরভাবে ভাবেনি। আমরা সব সময়ই বলে আসছি, জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটেও ষড়যন্ত্র হচ্ছে, ডাকসুতেও এর প্রতিফলন দেখা গেছে। তবে মূল দায় প্রশাসনের পক্ষপাতেরই বলে আমি মনে করি।

commentaires