বেবিচকে দুর্নীতির সিন্ডিকেট, নেপথ্যে ‘মানিকজোড়’

Comentários · 22 Visualizações

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দুই সদস্য মিলে গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির সিন্ডিকেট। আলোচিত এই দুজন হলে

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দুই সদস্য মিলে গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির সিন্ডিকেট। আলোচিত এই দুজন হলেন—বেবিচকের সদস্য (প্রশাসন) এসএম লাবলুর রহমান ও সদস্য (অপারেশনস) এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহেবুব খান। এর মধ্যে এসএম লাবলুর রহমান ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে করার ‘উপহার’ হিসাবে সরকারি ফ্ল্যাটও বাগিয়ে নেন। 

 

সংস্থাটির ভেতরে-বাইরে ‘মানিকজোড়’ হিসাবে পরিচিত এই কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। 

 

সমঝোতা ছাড়া এই দুই কর্মকর্তার দপ্তর থেকে কোনো ফাইল নড়ে না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসাবে পরিচিত এই কর্মকর্তারা বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যানের আশীর্বাদে গড়ে তোলেন দুর্নীতির একটি দুষ্টচক্র। 

 

প্রাপ্ত অভিযোগের নথি ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

 

গত ৬ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, মোটা অঙ্কের টাকা ঘুস না দেওয়ায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে থাকা ১৬টি প্রতিষ্ঠানের লিজ বাতিলের সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরেন ১০ জন ব্যবসায়ী। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দ্রুত তাদের বেবিচক থেকে প্রত্যাহারের দাবিও করেন তারা।

 

একই সংস্থার সদস্য (অর্থ) থাকাকালে এসএম লাবলুর রহমানের বিরুদ্ধে উন্নয়ন কাজের বিল আটকে ঘুস আদায়সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বর্তমানে তিনি সদস্য (প্রশাসন) হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ নিয়ে ভেতরে-বাইরে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

 

জানা গেছে, ২০২০ সালে বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা আবু সাঈদ মেহেবুব খান পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে প্রেষণে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিচালক হিসাবে প্রথম দফায় যোগদান করেন। প্রায় দেড় বছর দায়িত্ব পালন শেষে তিনি নিজ বাহিনীতে ফেরত যান। এরপর গত বছর তিনি ফের বেবিচকে প্রেষণে যোগ দিয়ে সদস্য (প্ল্যানিং) এবং পরে সদস্য (অপারেশনস) পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এই পদে পদায়নের পরই বাংলাদেশের সব বিমানবন্দর পরিদর্শনের মাধ্যমে তার নিজের একটি দুর্নীতির সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে প্রতিষ্ঠানগুলোর লিজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কাগজপত্র আহ্বান করেন। মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের ঘুস দাবি করেন। ব্যবসায়ীরা তাকে ঘুস দিতে না পারার কারণে ১৬টি প্রতিষ্ঠানের লিজ বাতিল করে দেন।

 

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুসের বিনিময়ে তাকে ওই ১৬টি প্রতিষ্ঠানের লিজ দেওয়ার তৎপরতা চলছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবস্থিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও পুনঃলিজের নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।

 

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, গত জুন মাসে তিনি (আবু সাঈদ মেহেবুব খান) ফ্রান্স সফরে যান। মূলত সেখানেই এই ঘুসের লেনদেন হয়। বর্তমানে ১৬টি প্রতিষ্ঠানের কাউকে এমনকি অন্য কাউকে স্থানগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। যার কারণে সরকার এই খাত থেকে আসা বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। আবু সাঈদ মেহেবুব খানের দপ্তরে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ‘লালফিতায় বন্দি’ রয়েছে। দুটি সুইপার গাড়ি কেনার ফাইলও তার দপ্তরে আটকে আছে। যেসব ফাইলের ব্যাপারে উৎকোচের চূড়ান্ত নিশ্চয়তা পান শুধু সেসব ফাইল অনুমোদনের জন্য চেয়ারম্যানের দপ্তরে পাঠানো হয় বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

 

আরও জানা গেছে, এর আগে সদস্য (অর্থ) থাকাকালে এসএম লাবলুর রহমানের বিরুদ্ধে উন্নয়ন কাজের বিল আটকে রেখে ঘুস নেওয়া, ঠিকাদারকে বিশেষ সুবিধা দিতে নিজেদের প্রকৌশলীদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি একজন সহকারী প্রকৌশলীকে নিজ অফিসে ডেকে নিয়ে চাকরিচ্যুতির হুমকি দেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। সংস্থাটির আগের চেয়ারম্যান তার কবজায় থাকায় অনেক সহসেই নানা অপকর্ম করে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছেন।

Comentários