মানুষের হৃদয় প্রেমে স্পন্দিত হয়, আবেগে আন্দোলিত হয়। প্রেমই তাকে করে কোমল, স্বপ্নময় এবং কল্পনার জগতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—প্রেমের নামে যা কিছু ঘটে, সবই কি প্রকৃত প্রেম? নাকি কখনো তা হয়ে ওঠে আত্মপ্রবঞ্চনা, ক্ষণস্থায়ী আকর্ষণ, কিংবা নিষিদ্ধ পথের গোপন অভিযাত্রা?
আমাদের সমাজে দিন দিন বেড়ে চলেছে একটি প্রবণতা—বিয়ের আগে অবৈধ প্রেম, গোপন সাক্ষাৎ আর লুকোচুরি সম্পর্ক, তারপর একসময় সেই প্রেমকে বৈধ করার জন্য বিয়ে।
ধর্ম, নৈতিকতা ও সমাজ—সব কিছুর সামনে এই প্রশ্ন অনিবার্য হয়ে ওঠে: এমন প্রেম কি সত্যিই বৈধ, নাকি এটি কেবল অবৈধতার স্মৃতি নিয়ে শুরু হওয়া বৈধতার এক খণ্ডিত প্রচেষ্টা?
ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ পবিত্র একটি প্রতিষ্ঠান, যার মাধ্যমে মানবজীবনে স্থাপিত হয় শুচিতা ও প্রশান্তি।
মহান আল্লাহ কুরআনে ঘোষণা করেছেন—“আর তোমরা ব্যভিচারের নিকটেও যেও না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ”। (সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত ৩২)
একইসঙ্গে তিনি আরেক জায়গায় বলেছেন—“আর তার নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই সৃষ্টি করেছেন সঙ্গিনী, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও, আর তিনি তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন ভালোবাসা ও দয়া”।(সূরা রূম, আয়াত ২১)
এই দুটি আয়াতই আমাদের সামনে খুলে দেয় একটি পরিস্কার পথ—প্রেম বৈধ, কিন্তু তা কেবল বিবাহের মাধ্যমে; প্রেম নিষিদ্ধ, যখন তা বিবাহের সীমানার বাইরে।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন—“হে তরুণগণ! তোমাদের মধ্যে যার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব, সে যেন বিয়ে করে। কারণ এটি দৃষ্টিকে নত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করে”।(সহিহ বুখারী, কিতাব আন-নিকাহ)
নবীর এই নির্দেশনা স্পষ্ট করে দেয় যে, প্রেমকে যদি সমাজ ও ধর্মের আলোয় বৈধ রূপ দেওয়া যায়, তবে সেটি কল্যাণকর; কিন্তু যদি তা অবৈধ পথে লালিত হয়, তবে সেটি কেবল পাপের অন্ধকারই ডেকে আনে।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—যে সমাজে অবৈধ সম্পর্ক বিস্তার লাভ করেছে, সে সমাজ অবক্ষয়ের শিকার হয়েছে। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ ছিল নৈতিক অবক্ষয় এবং অবাধ যৌনাচার।
মধ্যযুগীয় ইউরোপও একসময় নিমজ্জিত হয়েছিল অনৈতিক প্রেম ও ব্যভিচারের অন্ধকারে, যা ভেঙে দিয়েছিল পারিবারিক শৃঙ্খলাকে। ইসলাম সে কারণেই প্রেমকে নিষিদ্ধ করেনি, বরং তা নিয়ন্ত্রণ করেছে বিবাহের পবিত্র ছাদের নিচে।