চালভর্তি নৌকাগুলো সকাল থেকেই ভিড়তে শুরু করে বরিশালের বানারীপাড়া পৌর শহরের লাগোয়া সন্ধ্যা নদীর বুকে গড়ে ওঠা হাটে। মায়াবী সন্ধ্যার জলে ঢেউয়ে দুলতে দুলতে হয়ে ওঠে এক অভাবনীয় দৃশ্য। একেকটি নৌকাই যেন ভাসমান দোকান আর তার ভেতরে শতাব্দীর ঐতিহ্য। ক্রেতারা আসেন, দর-কষাকষি করেন। কেউবা আবার চালের বোঝা পাইকারি নৌকায় তুলে দেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে এই হাট। শনি ও মঙ্গলবার সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্ধ্যা নদী জেগে ওঠে এক বিশেষ উৎসবে। স্থানীয় লোকজন এই হাটকে ‘ভাসান মহল’ বলে ডাকেন।
চালের হাট থেকে ধানের হাট
চালের হাট বসে নদীর এক পাড়ে। ঠিক বিপরীত পাড়ে বসে ধানের হাট। কুটিয়ালরা এখান থেকে ধান কেনেন, নিয়ে যান চাতালে। কয়েক দিনের মধ্যে সেই ধান রূপ নেয় চালের সোনালি দানায়। ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে চালের হাট। এরপর জমে ওঠে ধানের হাট। ধানের মৌসুমে হাটের রং আরও গাঢ় হয়। তখন রবি ও বুধবার অতিরিক্ত হাট বসে, যাকে স্থানীয় লোকজন বলেন ‘গালা’।
একসময় এই হাট ছিল বালাম চালের মোকাম। এই চালের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বরিশালজুড়ে। বানারীপাড়ার মলঙ্গা গ্রামে ছিল এই চাল প্রক্রিয়াকরণের আস্তানা। আজ সেই বালাম চাল প্রায় বিলুপ্তির পথে। স্থানীয় জাতের ধান ও ব্রি ধানের চাল এখন হাটের মূল ভরসা। যদিও সেই চালে নেই বালামের সুঘ্রাণ। তবু ভাসমান হাটে মিশে আছে গৃহস্থালির মাটির গন্ধ, স্বাদে স্নিগ্ধতা।