মতভিন্নতা কাটেনি, নিজ অবস্থানে অনড় দলগুলো

Comentarios · 12 Puntos de vista

জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দল-জোটগুলোর মতভিন্নতা এ?

The Daily Ittefaq

সর্বশেষ

বিশেষ সংবাদ

জাতীয়

সারাদেশ

রাজনীতি

বিশ্ব সংবাদ

খেলা

বিনোদন

অর্থনীতি

লাইফস্টাইল

টেক

আইন-আদালত

ভিডিও

মতামত

অন্যান্য

Eng

menu

রাজনীতি

রাজনীতি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি

মতভিন্নতা কাটেনি, নিজ অবস্থানে অনড় দলগুলো

আলোচনায় সংবিধান আদেশ জারি, গণভোট ও সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ

দলগুলোর সঙ্গে আজ আবার বসছে ঐকমত্য কমিশন, চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতির বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করলেন কমিশনের সদস্যরা

শামছুদ্দীন আহমেদ

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:০০

মতভিন্নতা কাটেনি, নিজ অবস্থানে অনড় দলগুলো

জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দল-জোটগুলোর মতভিন্নতা এখনো কাটেনি। বাস্তবায়নের পদ্ধতি প্রশ্নে দলগুলো এখন পর্যন্ত যার যার অবস্থানে অনড়। বিএনপিসহ দলটির মিত্র দল-জোটগুলো চায় সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হবে জাতীয় নির্বাচনের পর, নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে। অন্যদিকে জামায়াত ও চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের আগেই প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন এবং এর ভিত্তিতেই নির্বাচন দাবি করছে।

 

 

gnewsদৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

দলগুলোর সঙ্গে আজ আবার বসছে ঐকমত্য কমিশন

 

জুলাই সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি প্রশ্নে দলগুলোর এমন অনড় অবস্থানের মধ্যেই আজ রবিবার ‘চূড়ান্ত’ পর্বে দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসছে ঐকমত্য কমিশন। সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে কমিশন আজ বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে।

 

চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতির বিষয়ে কমিশনের বৈঠক

 

দলগুলোর সঙ্গে আজ আলোচনার আগে গতকাল শনিবার ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন। সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে কমিশন চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেছে। বিশেষত, আজ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের মুলতবি সভায় যেসব বিষয়ে আলোচনা করা হবে, সেগুলো চূড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া, বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে ইতিপূর্বে বিশেষজ্ঞদের প্রদত্ত মতামত ও পরামর্শসমূহ পুনরায় পর্যালোচনা করা হয়। পাশাপাশি এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে পাওয়া অভিমতগুলোও পুনরায় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বৈঠকে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও সভায় অংশ নেন।

 

বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির অবস্থান

 

জুলাই সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন পদ্ধতি প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান বিপরীতমুখী। বিএনপির মতে, সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের বৈধ পন্থা হচ্ছে জাতীয় সংসদ। নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে এগুলো বাস্তবায়ন করলে ভবিষ্যতে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকবে না। এর বাইরে অন্য কোনো উপায়ে সংবিধান সংস্কার করা সম্ভব কি না, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া যেতে পারে বলেও মনে করে বিএনপি।

 

অন্যদিকে, জামায়াতও চায় আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। এর ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হতে হবে। সংবিধান আদেশ জারির মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন চায় দলটি। এছাড়া সংবিধান সংশোধনে নির্বাচনের আগেই গণভোটও চায় জামায়াত। আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায় গণপরিষদের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদই একই সঙ্গে গণপরিষদ এবং নিয়মিত সংসদ হিসেবে ফাংশন করতে পারে বলে অভিমত এনসিপির।

 

সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণকে বৈধ মনে করেন সালাহউদ্দিন

 

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়া দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘কোনো একটি আইনানুযায়ী বৈধ এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানকে পরিবর্তন করার কোনো অধিকার আমাদের কারো নেই। এমনটা হলে আগামী দুই বা পাঁচ বছর পরে বারবার এই প্রক্রিয়ায় আবার সংবিধান বদলের দাবি উঠবে।’ তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের অভিপ্রায় প্রকাশ হয়েছে। সেই অভিপ্রায়ের মধ্য দিয়ে এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা সঠিক; কিন্তু এই অভিপ্রায়কে বাস্তবায়নের জন্য তো আমাদের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। সংবিধানের আর্টিকেল ১০৬-এর দ্বারস্থ হতে হয়েছে। আমরা সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন দেখেছি। আমরা সেটিকে বৈধ প্রক্রিয়া মনে করি।’

 

আলোচনায় সংবিধান আদেশ জারি, গণভোট ও সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ

 

এদিকে, জুলাই সনদের সংবিধান-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বাস্তবায়নে সম্ভাব্য চারটি উপায় নিয়ে ভাবছে ঐকমত্য কমিশন। এগুলো হচ্ছে—জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ দফা অনুসরণ করে একটি ‘সংবিধান আদেশ’ জারি, গণভোট, গণপরিষদ গঠন এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতির বিষয়ে আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনায় ঘুরে-ফিরে এই চারটি সম্ভাব্য উপায় উঠে এসেছে। সর্বশেষ, গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করেছে ঐকমত্য কমিশন। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায় সম্পর্কে সরকারের কাছে একাধিক সুপারিশ উপস্থাপন করবে।

 

এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, একটি ‘সংবিধান আদেশ’ জারির মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলো কার্যকর করা যায় বলে মতামত দিয়েছেন আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। তাদের মত, গণভোটের মাধ্যমে ‘সংবিধান আদেশ’ জনগণের অনুমোদন লাভ করতে পারে। এছাড়া, প্রস্তাবিত গণভোট আয়োজনের বিষয়টি সংবিধান আদেশে উল্লিখিত থাকবে—এমন মতামত দিয়ে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একসঙ্গেই এই গণভোট হতে পারে।

 

তিনি জানান, জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে একটি সমন্বিত পরামর্শ বা অভিমত পাওয়া গেছে। তাদের পূর্বে প্রস্তাবিত দুটি বিকল্প, ‘গণভোট’ এবং ‘সংবিধান আদেশ’—এ পর্যায়ে সমন্বিত করে তারা ওপরিউক্ত চূড়ান্ত অভিমত দিয়েছেন। তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায় হিসেবে কমিশন সরকারের কাছে যেসব সুপারিশ পেশ করবে, তার মধ্যে এটি হতে পারে অন্যতম।

 

আলী রীয়াজ জানান, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শটি রাজনৈতিক দলগুলোকে অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পরামর্শ চাওয়ার বিষয়েও মতামত দিয়েছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তবে ভিন্নমতও রয়েছে।

 

১০ অক্টোবরের মধ্যেই সুপারিশ চূড়ান্ত করে সরকারকে দিতে চায় কমিশন

 

ঐকমত্য কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ১০ অক্টোবরের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন-পদ্ধতি নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করে সরকারকে দিতে চায় কমিশন। তাদের লক্ষ্য, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সব দলের স্বাক্ষরের মাধ্যমে সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া। সর্বশেষ বর্ধিত সময় অনুযায়ী আগামী ১৫ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কমিশন ১৫ অক্টোবরের মধ্যেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করতে চায়।

Comentarios