ঝড়ো শুরুর পর হঠাৎ ধস। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে না পারা। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং ব্যর্থতায় বড় ব্যবধানে হেরে গেল পাকিস্তান কোচ। ম্যাচ শেষে নিজেদের দায় মেনে নিয়েই মিরপুরের উইকেটকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য মানসম্মত নয় বলেন পাকিস্তানের প্রধান কোচ মাইক হেসন।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববারের ম্যাচে মাত্র ১১০ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। মুস্তাফিজুর রহমানের স্লোয়ার, কাটারসহ বৈচিত্রপূর্ণ বোলিংয়ের কোনো জবাব দিতে পারেননি ফাখার জামান, খুশদিল শাহরা। পরে পারভেজ হোসেনের ঝড়ো ফিফটিতে ৭ উইকেটের অনায়াস জয়ই পায় বাংলাদেশ।
ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে তাসকিন আহমেদ বোলিং শেষ করার পরই উইকেট বুটের ক্ষত সৃষ্টি হতে দেখা যায়। তাই বলে যে, ব্যাটসম্যানদের মৃত্যুকূপ হয়ে যায় উইকেট, তেমন নয়। ম্যাচ জুড়ে খুব অল্প কিছু ডেলিভারির আচরণ ছিল অস্বাভাবিক। এর বাইরে কাটার ও স্লোয়ারের দারুণ ব্যবহারে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখেন মুস্তাফিজ, তানজিম হাসানরা। এর বাইরে বাজে রানিং বিটুইন দা উইকেটও ভোগায় সফরকারীদের।
ফাখার জামানের ৩৪ বলে ৪৪ রান ছাড়া পাকিস্তানের কোনো ব্যাটসম্যান সুবিধা করতে পারেননি। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তাই ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা মেনে নেন হেসন। একইসঙ্গে উইকেট নিয়েও অসন্তোষ জানিয়ে দেন পাকিস্তানের প্রধান কোচ।
“আমার মনে হয় না, এমন উইকেট কারও জন্য ভালো। আমার মতে, কেউ যখন এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, এই ধরনের উইকেট তখন গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যাট হাতে আমাদের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কোনো অজুহাত নয় এটি। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য এই উইকেট মানসম্মত নয়।”
একই উইকেটে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে আবার সাবলীল ব্যাটিংই করেন পারভেজ। ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৬ রানের অপরাজিত ইনিংসে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
সংবাদ সম্মেলনে বাঁহাতি ওপেনার বলেন, উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা।
“টি-টোয়েন্টির জন্য উইকেট আদর্শ নয়? এমন কিছু তো মনে হয়নি। দেখুন, আমরা ১১০ রান ১৬ ওভারের মধ্যে করে ফেলেছি। যদি পুরো ২০ ওভার খেলতাম তাহলে ১৬০ রান করতে পারতাম। তাই আমার মনে হয়নি, উইকেট ওরকম কিছু ছিল। হতে পারে ওরা মানিয়ে নিতে পারেনি। আমরা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি।”
রান তাড়ায় বাংলাদেশের শুরু অবশ্য তেমন ভালো ছিল না। তিন ওভারের মধ্যে ড্রেসিং রুমে ফেরেন তানজিদ হাসান ও লিটন। এরপর তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে ৭৩ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যান পারভেজ।
তুলনামূলক বোলিং সহায়ক উইকেটে কোন পরিকল্পনায় সাফল্য পেলেন সেটিও জানালেন ২৩ বছর বয়সী ওপেন্র।
“মিরপুরের উইকেটে বোলারদের জন্য একটু সাহায্য থাকেই। এটা নিয়মিত বিষয়। আমরা চেষ্টা করেছি, উইকেট বুঝে যত দ্রুত এখানে সেট হওয়া যায়। এটাই আমাদের পরিকল্পনা ছিল। উইকেটের বাউন্স অসম ছিল না। এক-দুইটা বল হতেই পারে। বোলারদের বুটের কারণে তৈরি হওয়া ক্ষতের কারণে হতে পারে।”
হেসনের ভাবনা অবশ্য ভিন্ন। বিশ্ব ব্যাপী নানান ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা থেকে তার উপলব্ধি, এই ধরনের উইকেটে খেলা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের দীর্ঘ মেয়াদে তেমন উপকার করবে না।
“আমার মনে হয় না, বাংলাদেশের বাইরে গেলে এটি তাদের সাহায্য করবে। তবে এটিও সত্যি এই পরিস্থিতিতে ব্যাটিং করা খুব চ্যালেঞ্জিং। আপনি জানেন না, ১৩০ না ১৫০, ঠিক কত রান যথেষ্ট হবে।”
“এরপর আপনি যখন বাইরে গিয়ে ভালো উইকেটে খেলবেন, দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে যাবে। তাই আমার মনে হয়, এটি কারও জন্যই ভালো নয়। তবে আবারও বলছি, যে কোনো উইকেটে আমাদের ভালো খেলতে হবে। দল হিসেবে আমরা সেটিরই চেষ্টা করব।”
পিচ রিপোর্টের সময় পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার আমির সোহেল বলেছিলেন, উইকেট বেশ দৃঢ়। তবে গত কয়েক দিন ধরে ঢাকায় নিয়মিত বৃষ্টি হওয়ায় উইকেটের নিচে কিছুটা আর্দ্রতা থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে কিছুটা সহায়তা পেতে পারেন স্পিনাররা। তবে ম্যাচে দাপট বেশি দেখা গেছে পেসারদেরই।