শৈশবে মা–বাবার বিচ্ছেদের পরই যক্ষ্মা, কৈশোরে যৌন নিপীড়নের শিকার, ইরা খানের লড়াইয়ের গল্প

Komentar · 13 Tampilan

বলিউডে প্রথম সারির তারকার একমাত্র কন্যা। যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডসের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোন??

বলিউডে প্রথম সারির তারকার একমাত্র কন্যা। যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডসের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। অনেকেই ভেবেছেন, আমিরকন্যা ইরা হয়তো বলিউডেই ক্যারিয়ার গড়বেন। কিন্তু বলিউড তাঁকে কোনো দিনই টানেনি। বরং একটা ছিমছাম, সুন্দর জীবনই ছিল তাঁর একান্ত কাম্য। ২৮ বছরের জীবনে মা–বাবার বিচ্ছেদ, অসুখ, যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া, বিচ্ছেদ—একের পর এক আঘাতে পর্যুদস্ত ইরার জীবন। তবে বারবার ভেঙেচুড়ে পড়ে যাওয়ার পরও দ্বিগুণ উদ্যমে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টাও চলছে অবিরাম। নানা রকম ট্রমাকে সঙ্গী করে এগিয়ে চলেছেন বলিউডের অন্য রকম এক স্টার কিড ইরা খান।

২০০২ সালে বিচ্ছেদ হয় বলিউডের ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ আমির খান ও তাঁর প্রথম স্ত্রী রীনা দত্তের। তখন এই দম্পতির কন্যা ইরা খানের বয়স মাত্র ৫ বছর।

ছয় বছর বয়সে টিবি বা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন ইরা। ফলে মা–বাবার বিচ্ছেদের যন্ত্রণা ভালোভাবে বুঝে উঠতে না উঠতেই যক্ষ্মার সঙ্গে লড়তে হয় তাঁকে। ছবিতে ছোট্ট ইরা ও ভাই জুনাইদ।

১৪ বছর বয়সে যৌন নিপীড়নের শিকার হন তিনি। তার পর থেকেই আক্রান্ত হন ভীষণ বিষণ্নতায়।

অবস্থা এমন ছিল যে ইরা খান প্রতিদিন ঘুমের ওষুধ খেয়ে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা ঘুমাতেন। এভাবে চলেছে চার থেকে পাঁচ বছর।

‘পিঙ্কভিলা’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরা বলেন, ‘আমি আসলে এতটাই বিষণ্ন ছিলাম যে আমার আর লড়াই করার শক্তি ছিল না। আমি চাইতাম ঘুমিয়ে পড়তে, আর ঘুম থেকে কোনো দিন জেগে না উঠতে।’

নেটফ্লিক্সের মেন্টাল হেলথ পডকাস্টে ডা. বিবেক মূর্তিকে লম্বা সাক্ষাৎকারে আমির খানকে সঙ্গে নিয়ে কথা বলেন ইরা খান। সেখানে ইরা বলেন, ‘আমি সেই সন্তান, যার মা–বাবা দুজনই পেশাজীবনে সফল। এই মা–বাবা তার জন্য অনেক অর্থ খরচ করেছেন, কিন্তু দিন শেষে সে কিছুই করতে পারেনি, পারছে না।’

সাত মাস আগের ওই সাক্ষাৎকারে ইরা আরও বলেন, ‘একটানা ১০ বছর আমার চিকিৎসা চলেছে। আমি এখনো বিষণ্নতায় ভুগছি। তবে দুই বছর হলো, আমার মনে হচ্ছে, আমি বেঁচে যাব।’

ইরা আরও জানান, বিখ্যাত মানুষের সন্তান হওয়া যতটা আশীর্বাদ, ততটাই অভিশাপ। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর হাজারো, লাখো মানুষ আমাকে বুলি করেছে। বলেছে, আমি ‘স্পয়েল্ড চাইল্ড’, ‘গুড ফর নাথিং’, ‘আমাকে দিয়ে কিছু হচ্ছে না, হবেও না’।

ইরা জানান, নিজের কিছু সিদ্ধান্তও তাঁর বিষণ্ণতা বাড়িয়েছে।

এর আগে তরুণ সংগীতশিল্পী, প্রযোজক ও কম্পোজার মিশাল কৃপালানির সঙ্গে দুই বছরের সম্পর্কে ছিলেন ইরা। তাঁরা ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রে একসঙ্গে থেকেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের অন্তরঙ্গ কিছু ছবি ভাগ করে মিশালকে প্রেমিক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছুদিন পরই নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন মিশাল।

এরপর ইরাও খুব দ্রুত নতুন আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তবে সেটিও বেশিদিন টেকেনি।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ইরা তাঁর বাবা আমির খানের ফিটনেস ট্রেইনার নূপুর শিখরকে বিয়ে করেন। এর আগে আড়াই বছর প্রেম করেছেন এই জুটি।

সম্পর্কের একেবারে শুরুতেই নূপুরকে নিজের জীবনের সব ঘটনা জানিয়ে ইরা জানতে চেয়েছিলেন, তিনি ইরাকে বিয়ে করতে পারবেন কি না। সব শুনে নূপুর বলেছিলেন, তাড়াহুড়ো না করে আরেকটু ভাবতে, সময় নিতে।

নূপুর বলেছিলেন, ‘আমি এটুকু নিশ্চিত করতে পারি যে আমি আছি, কোথাও যাচ্ছি না। তুমি সময় নাও। সেরে ওঠো। কোনো কিছু দিয়ে প্রভাবিত হয়ে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ো না। নিজের মনের ওপর কোনো চাপ নিয়ো না।’

দীর্ঘ সময় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে লড়াই করা ইরা খান ২০২১ সালের মার্চে ‘আগাতসু’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন করেন। এটি একটি মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র।

ইরা ওই পডকাস্টে বলেন, ‘আমি এক ব্যর্থ মানুষ, যে নিজের সবটুকু জড়ো করে কেবল বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।’

তখন পাশ থেকে আমির খান তাঁর ২৮ বছর বয়সী একমাত্র কন্যাকে বলেন, ‘মোটেও না। তুমি দুর্দান্ত করছো। সামনে আরও ভালো করবে। একটা জীবন তোমার পড়ে আছে। তুমি যেকোনো কিছু করার সামর্থ রাখো।

এক ফ্রেমে ইরা, রিনা রত্ত, নূপুর শিখর, নূপুরের মা ও জুনাইদ।

 

Komentar