চট্টগ্রাম মহানগরের চারটি সংসদীয় আসনে মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ চলছেই। আসনগুলো হলো-চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি), চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী হালিশহর), চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা)। ২০ লাখ ভোটারের চার আসনে চলছে দলগুলোর প্রার্থী নির্বাচনের হিসাব। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরই শুরু হয় মনোনয়নের দৌড়। সেই দৌড়ে মনোনয়ন প্রত্যাশিদের কেউ আছেন এগিয়ে কেউ পিছিয়ে। চার আসনে বরাবরের মতো ‘প্রার্থী’ আলোচনায় এক নম্বরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক সমর্থন এবং আগের নির্বাচনি হিসাব মিলিয়ে জয়ের আভাস মিলছে বিএনপি প্রার্থীদেরই। তাই বিএনপির মনোনয়ন পেতে পুরোনোদের সঙ্গে আশায় বুক বেঁধেছেন নতুন প্রার্থীরাও।
দলের গ্রিন সিগন্যাল পেতে স্থানীয় পর্যায় থেকে শীর্ষ পর্যায়ে প্রার্থীরা বাড়িয়েছেন জনসংযোগ। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল-অসন্তোষ দেখে। সম্প্রতি নগরীতে চলমান ওয়ার্ড কমিটি ও মহানগরীর কাউন্সিল নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এতে দলের অভ্যন্তরে বিভক্তি স্পষ্ট হচ্ছে। নতুন আহ্বায়ক কমিটি, বিভিন্ন ওয়ার্ড ও মহল্লা কমিটি ঢেলে সাজানোর চেষ্টা হিতে বিপরীত হলো কি না তা নিয়ে চিন্তিত নেতারা। ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে উঠেছে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ। তবে নির্বাচনের আগে স্থানীয় পর্যায়ের এই বিরোধ মিটে যাবে এমন প্রত্যাশা তৃণমূল কর্মীদের।
অন্যদিকে গত সাড়ে পনের বছর চরম চাপে থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করে ফেলেছে। নগরের চার আসনের পাশাপাশি নগরীর বাইরে ১২ আসনে তারা চষে বেড়াচ্ছেন। ভোটের ভর মৌসুমে জোরালো আলোচনায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ভোট বাক্স। চার আসনে এই বাক্সের ভোট কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণও। আর এই ভোট বাগিয়ে নির্বাচনে জেতার অসম স্বপ্ন দেখছে জাতীয় নির্বাচনে জামানত বাতিল হওয়া ছোট দলগুলো। পাশাপাশি আভাস মিলছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার। নতুন এই দলের সাংগঠনিক ভিত্তি এখনও অনেক দুর্বল। এরপরও নির্বাচনে লড়ে জয় ছিনিয়ে আনার ব্যাপারে আশাবাদী দলের তরুণ নেতারা।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর এনসিপির নেতা রিয়াজুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর চারটি সংসদীয় আসনসহ সারা দেশে সংগঠনের প্রার্থী ঘোষণার চিন্তাভাবনা আছে। বিষয়টি নিয়ে শিগগির দলের অবস্থান তুলে ধরা হবে। সামনের নির্বাচন নিয়ে চট্টগ্রামের এনসিপির নেতারা সাংগঠনিকভাবে তৎপর আছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতে ইসলামী পটপরিবর্তনের অল্প সময়ের মধ্যে সংসদীয় আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। প্রার্থী নিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই। প্রার্থীরাও প্রচারণা চালাচ্ছেন নির্ভার হয়ে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল না থাকায় আগেভাগে প্রচারণার বেশ সুফল মিলছে। চার আসনে দলের প্রার্থীরা তুমুল প্রচারণা ও গণসংযোগে যুক্ত আছেন। সামাজিক কাজে অংশগ্রহণও বাড়িয়েছেন। বিএনপির পুরোনো দুর্গ নগরের চার আসনে প্রার্থী জেতা কঠিন হলেও জামায়াত ইসলামী হাল ছেড়ে দেয়নি। দলের নেতারা বলছেন, জয়ের লক্ষ্য নিয়ে প্রার্থীরা মাঠে আছেন। জয় নিয়েই ঘরে ফিরতে চান তারা।
চট্টগ্রাম-৮ : (চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ-বোয়ালখালী) বিএনপির আবু সুফিয়ান, এরশাদ উল্লাহ, মোশতাক আহমদ, জামায়াতের ডা. নাছের
নগরীর সঙ্গে লাগোয়া এই সংসদীয় আসনের ভোটের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দেন চান্দগাঁও এলাকার মানুষ। বোয়ালখালী উপজেলার ভোটাররাও বরাবরের মতো থাকেন বড় ফ্যাক্টর হিসাবে। বিএনপির একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। আসনটিতে আগে থেকেই তৎপর ছিলেন বিএনপির দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী। এর মধ্যে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ। মোশতাক আহমেদ নামে বিএনপির আরও এক প্রার্থী মনোনয়ন পেতে মরিয়া। করছেন সভা, সমাবেশ ও জনসংযোগ। এই আসনে বিএনপির প্রার্থিতা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি।
এই আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতা আবু সুফিয়ান। এবারও তিনি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। সময়ের আলোকে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বৈরী সময়েও আমি প্রচুর ভোট পেয়েছিলাম। আমি এলাকার জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। আশা করছি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে আমার দল এবারও চট্টগ্রাম-৮ আসনে আমাকে মনোনয়ন দেবে।
জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে বরাবরের মতো এগিয়ে। এই আসনে জামায়াতের কেন্দ্র ঘোষিত প্রার্থী ডা. আবু নাছের। তিনি চান্দগাঁও মোহরা পাঁচলাইশ থেকে বোয়ালখালীর প্রত্যন্ত জনপদে জনসংযোগ করেই যাচ্ছেন। এলাকায় চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতি থাকায় ভোটারদের বেশ প্রভাবিত করতে পারছেন তিনি।
নির্বাচনি এলাকা বোয়ালখালী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন রেজা বলেন, শহরের সঙ্গে যুক্ত এই আসন। মাঝখানে কর্ণফুলী নদী এবং কালুরঘাট একমুখী সেতু বিভক্ত করেছে উপজেলার লোকজনকে। তাই সবসময় আসনের শহরের অংশে উন্নয়ন বেশি হয়। পিছিয়ে থাকে বোয়ালখালীর বাসিন্দারা। বর্তমানে বোয়ালখালীবাসীর একটি দাবি কালুরঘাট সেতু নির্মাণ। যিনি প্রার্থী হবেন তার কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে এই সেতু যেন দ্রুত নির্মাণ করা হয়। পাশাপাশি বোয়ালখালীর স্বাস্থ্যব্যবস্থার আধুনিকায়ন চাই আমরা।
নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আবু তৈয়ব আশরাফি বলেন, বোয়ালখালী উন্নয়নে পিছিয়ে আছে। কেবল উন্নয়নের মুলা ঝুলিয়ে প্রতিবার প্রার্থীরা নির্বাচনি বৈতরণী পার হন। আমরা বোয়ালখালীর পাশাপাশি এই আসনে শহরের অংশে সমান উন্নয়ন কার্যক্রম প্রত্যাশা করব প্রার্থীদের কাছে।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) বিএনপির মীর নাছির, আবুল হাশেম, শামসুল-জামায়াতের ডা. ফজলুল
এই আসনে যে দলের প্রার্থী জয়লাভ করেন সরকার গঠন করে সেই দল-এমন একটি প্রবাদ আছে দীর্ঘদিন ধরে। ভিআইপি আসন হিসেবেও পরিচিত চট্টগ্রামে। ভোটারবিহীন নির্বাচনে ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এবারও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এমন আভাস মিলছে। মনোনয়ন পেতে দৌড়ে আছেন সাবেক মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম। প্রচারণায় আরও আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শিল্পপতি শামসুল আলম। জাতীয় দলের অধিনায়ক ক্রিকেটার তামিম ইকবালের নামও শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগে থেকেই সক্রিয় আছেন নগর বিএনপি নেতা আবুল হাসেম।
মনোনয়ন চাওয়া নিয়ে আবুল হাসেম সময়ের আলোকে বলেন, আমি দলের কঠিন সময়ে নগর বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলাম। আমি এই আসনে আগেও মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবারও মনোনয়ন চাইব। দল আমাকে মনোনয়ন দেবে এই প্রত্যাশা আছে। আমার এলাকায় জনগণের জন্য সারা বছরই আমি কাজ করি। এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে আরও বেশি কাজ করে যাচ্ছি।
এই আসনে বিএনপির পাশাপাশি মাঠে সক্রিয় আছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ডা. ফজলুল হক। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে, অলিগলিতে তিনি নিয়মিত ঢুঁ মারছেন। এলাকার মসজিদ-মাদরাসা ও ওয়ার্ডভিত্তিক সভা করছেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ভোটারদের নিয়ে বেশ বড় জমায়েত করেন তিনি। এই আসনের বিভিন্ন এলাকার বড় সমস্যা ছিল জলাবদ্ধতা। তিনি ভোটারদের আশ্বাস দিচ্ছেন এই সংকট থাকবে না। পাশাপাশি নির্বাচনি এলাকায় ছিনতাই-চাঁদাবাজি নিরসনসহ উন্নয়নের আশ্বাস দিচ্ছেন ভোটারদের। বেশ আস্থার সঙ্গে বলছেন অনিয়ম, দুর্নীতি প্রতিরোধের পাশাপাশি জনদুর্ভোগ কমাতে নিরলসভাবে কাজ করবেন।
কোতোয়ালি এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ আহমেদ বলেন, চট্টগ্রামের এই সংসদীয় আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বড় সমস্যা ছিনতাই-চাঁদাবাজি। অপরিকল্পিত উন্নয়ও একটি বড় সমস্যা। যে দলের প্রার্থী জিতুক তার কাছে প্রত্যাশা থাকবে জনজীবনে যাতে স্বস্তি ফিরে আসার ব্যবস্থা করেন।
চট্টগ্রাম-১০ : (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, হালিশহর) বিএনপির আমীর খসরু, সাঈদ নোমান, জামায়াতের হেলালী
ঘনবসতির ভোটারদের বড় অংশের এই আসন ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, হালিশহর ও খুলশী এলাকা নিয়ে গঠিত। একসময় ছিল বিএনপির দুর্গ। আওয়ামী লীগের আমলে ভোটারবিহীন নির্বাচনে ভোটরারা পছন্দের প্রার্থী ঠিক করতে পারেননি। এবার সেই সুযোগ আসায় এই আসনের ভোটাররাও বেশ উচ্ছ্বসিত। এখানে শিল্প-কারখানা আছে প্রচুর। নানা সমস্যায় জর্জরিত এখানকার শিল্প প্রতিষ্ঠান। আছে দূষণ নিয়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ। পাহাড় কাটার ঘটনায় আলোচনায় আসে এই এলাকা। অন্য আসনের মতো এই আসনেও ভোটাররা চান নাগরিক দুর্ভোগ হ্রাসে নির্বাচিত সংসদ সদস্য যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেন। সব দলের প্রার্থীদের কাছে একই দাবি জানাতে চান ভোটাররা। ডবলমুরিং আসনে বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল আল নোমান একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর প্রার্থী নিয়ে দোলাচল ছিল।
বর্তমানে সভা-সমিতিতে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান। তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠায় এখন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় আছেন। বাবার প্রতি ভোটারদের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে এই আসনে লড়বেন এমন প্রত্যাশা অনেকের। যদিও ভোটে লড়ার আগ্রহ নিয়ে এখনও তিনি প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। তবে দলের কর্মীরা মনে করেন, নগরীর আলোচিত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উচ্চ শিক্ষিত সাঈদ আল নোমানের প্রতি লোকজনের আগ্রহ অনেক। বাবার ভোটাররাও চান তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। তবে এই আসনে হেভিওয়েট নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর প্রার্থী হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছে তার ছেলে ইসরাফিল খসরুর নাম। দুজনের কে প্রার্থী হবেন তা এখনও নিশ্চিত নয়। ধারণা করা হচ্ছে তিনি এই আসনে প্রার্থী হলে তার ছেলে ইসরাফিল খসরু চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে প্রার্থী হবেন। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে পিতা-পুত্রের প্রার্থিতার বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে জানান দলের নেতারা।
এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মাঠে সরব আছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী। নির্বাচনি এলাকার সবখানে তার উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার আগে তৎপরতা আরও বাড়বে বলে দলের কর্মীরা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) বিএনপির আমীর খসরু, ইসরাফিল খসরু, জামায়াতের শফিউল
চট্টগ্রাম নগরীর অভ্যন্তরে এই আসনেই আছে দেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ডখ্যাত চট্টগ্রাম বন্দর। আছে দেশের ৮০-৯০ ভাগ রাজস্বের জোগানদার চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। বন্দর ছাড়াও এই আসনের যুক্ত আছে পতেঙ্গা, ইপিজেড, সদরঘাট এলাকা। এই আসনে হেভিওয়েট নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নামই শোনা যাচ্ছে। চট্টগ্রাম-১০ আসনে তৎপর থাকায় দুই আসনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কোথায় তিনি লড়বেন তার হিসাব মেলানো যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে দলের নেতারা মনে করছেন। ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে তিনি এই আসন থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। অনেকের ধারণা শেষ পর্যন্ত তিনি এই আসন থেকে লড়বেন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে। তবে এই আসনেও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন আমীর খসরু মাহমুদের ছেলে ইসরাফিল খসরু। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, আমার প্রত্যাশা আছে চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার। তবে দল যাকে এই আসনে মনোনয়ন দেয় তিনিই প্রার্থী হবেন। আমি এলাকার লোকজনের পাশে অতীতেও থেকেছি। এখনও লোকজনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
অন্যদিকে এই আসনে জামায়াতের চূড়ান্ত প্রার্থী বন্দর থানা জামায়াত নেতা শফিউল আলম চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন এলাকায়। ছোট থেকে বড় সব ধরনের জনসমাবেশ এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছেন। ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও।
এই আসনে পরপর কয়েকবার সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের এমএ লতিফ। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি। এমএ লতিফের কার্যক্রমে নির্বাচনি এলাকার ভোটাররা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন। বিক্ষুব্ধ জনতা ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তাকে আত্মীয় বাসায় যাওয়ার পথে নগরীর জুবলী রোড এলাকা থেকে আটক করে যৌথবাহিনীর কাছে সোপর্দ করেছিল। লতিফ সাম্রাজ্যের অবসান হওয়ায় ভোটাররা নতুন মুখের দিকে চেয়ে আছেন। এলাকার ভোটারদের অভিযোগ, লতিফ উন্নয়নের নামে ভোটারদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। ভোটের লড়াই শেষ হওয়ার পর কারও খবর নিতেন না। এতে এলাকায় নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত আছেন অনেক মানুষ। বন্দরকেন্দ্রিক নানা সংগঠনের ইন্ধনের বড় হোতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন এমএ লতিফ। ভোটাররা মনে করেন, নতুন কেউ সংসদ সদস্য হলে এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রম সত্যিকারভাবে বেশি হবে। বন্দরকেন্দ্রিক অপরাজনীতিরও অবসান হবে।