বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার হিসেবে সুপরিচিত। সিলেট অঞ্চলে পাহাড়ি ছোট ছোট নালা ‘ছড়া’ নামে পরিচিত। সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের কোলে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের গ্রামের নামটিও লাকমা গ্রাম। গ্রামটিও বেশ সুন্দর। গ্রামের পিঠেই রূপবতী লাকমাছড়ার অবস্থান। পুরো এলাকাটাই যেন পাথর। পাহাড় থেকে নেমে আসা ছড়ার পানি পাটলাই নদ হয়ে হাওরে গড়ায়। এখান থেকে মেঘালয় পাহাড় এতটাই কাছে যে হাত বাড়িয়ে পাহাড় ছোঁয়ার ইচ্ছা জাগে।
ইতিহাস বলে, প্রাচীন শ্রীহট্টের তিন ভাগে ছিল জয়ন্তিয়া, গৌড় আর লাউড় রাজ্য। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ছিল ‘লাউড় রাজ্য’। রাজার রাজ্য নেই, তবে চিহ্ন পুরো এলাকাজুড়ে বিদ্যমান।
ছড়ার চরিত্রঃ
মেঘালয় পর্বতমালার ভাঁজে ভাঁজে সবুজের আস্তর। সবুজ পাহাড়ের বুক বেয়ে নেমে এসেছে সরু ঝরনা। হিমশীতল স্বচ্ছ জলরাশি নিজ সুরে কলকল করছে। ছড়ার পানিতে দাপাদাপি করছে লাকমা গ্রামের দুরন্ত শিশু-কিশোর। ছড়ার বুকজুড়ে চুনাপাথর ছড়ানো। শরতের আকাশে শুভ্র মেঘের আলিঙ্গন। কখনো নীলের ছায়া। সুদূরে ঝুলন্ত ব্রিজ। লাকমাছড়ার ওপরে ভারতীয়রা যোগাযোগের জন্য এটি নির্মাণ করেছে। পাহাড়ি এ সেতুটিও দেখতে দারুণ। একদিকে এমন মনলোভা লাকমা, আরেক দিকে হাওরের বিশালতা। লাকমাছড়া পা রেখেই চোখে শোভা পায় এমন সুন্দরের ছটা। কী অদ্ভুত সুন্দর। এ যেন প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য।
লাকমা ছড়ার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল এর নীরবতা ও নির্জনতা। এখানে নেই শহরের কোলাহল, নেই পর্যটকদের ভিড়। শুধু আছে ছড়ার কলকল শব্দ, পাতার খসখস আর দূরের পাখির ডাক। এই ছড়ার জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকার মুহূর্তটাই অনেকের কাছে মানসিক মুক্তির সমান। কেউ কেউ ধ্যান করে, কেউ ছবি তোলে, কেউ আবার শুধু বসে থাকে প্রকৃতির গভীরতায়।
সচেতনতা ও পরামর্শঃ
? স্থানীয় গাইড নেওয়া উচিত।
? প্লাস্টিক বা আবর্জনা ফেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া উচিত।
? সাঁতার না জানলে গভীর ছড়ায় প্রবেশ এড়ানো ভালো।
? দলবদ্ধভাবে গেলে নিরাপদ।
? পানির বোতল, শুকনো খাবার সাথে রাখুন।
? ব্যাকআপ জামা-কাপড় নিয়ে যান।
? হালকা ব্যাকপ্যাক ব্যবহার করুন।
? ট্রেকিং স্যান্ডেল/জুতা ব্যবহার করুন।
? ভালো গাইড থাকলে পথ হারানোর ভয় নেই।
লাকমা ছড়া একটি জায়গা নয়, এটি একটি অনুভব। যেখানে গিয়ে আপনি বুঝবেন প্রকৃতিকে ভালোবাসা মানে কী। বড় বড় পর্যটন স্পটের গ্ল্যামার এখানে নেই—আছে নির্মল একাকিত্ব, আছে আত্মার মুক্তি। সেখানে গেলে মানুষ কিছুটা বদলে যায়—মন কিছুটা হালকা হয়, আর প্রকৃতি হয়ে ওঠে নিরব সঙ্গী।