ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত

Commenti · 18 Visualizzazioni

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি আয়োজন করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি আয়োজন করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইবরাহিমের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নতুন সরকারের জন্য নির্বাচনের আয়োজন করব। এর মাধ্যমে আমরা দেশ স্বাভাবিকভাবে পরিচালনার পথে ফিরিয়ে আনতে পারব। এজন্য আমাদের অনেক সহায়তা প্রয়োজন এবং আমরা মালয়েশিয়ার সহায়তা প্রত্যাশা করছি।’

তিন দিনের সরকারি সফরে সোমবার সন্ধ্যায় মালয়েশিয়া পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরের দ্বিতীয় দিন গতকাল সকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইবরাহিমের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রথমে দুই নেতা একান্ত বৈঠক করেন। পরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জনশক্তি ও জ্বালানি সহযোগিতা, নীল অর্থনীতি, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়সহ বিস্তৃত পরিসরের দ্বিপক্ষীয় বিষয় প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা করেন। বৈঠকে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক ও তিনটি সহযোগিতামূলক নোট বিনিময় স্বাক্ষর করা হয়। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন দুই সরকারপ্রধান। এ ছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শীর্ষক ব্যবসায়ী ফোরামে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা।

পাঁচ সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে-প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, এলএনজি সরবরাহ ও জ্বালানি সহযোগিতা, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ও মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (আইএসআইএস) মধ্যে সহযোগিতা, বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও মালয়েশিয়ান ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোইলেকট্রনিক সিস্টেমসের (এমআইএমওএস) মধ্যে সহযোগিতা এবং এফবিসিসিআই ও এনসিসিআইএমের মধ্যে সহযোগিতা। এ ছাড়া কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ, হালাল শিল্প খাত এবং উচ্চশিক্ষা সহযোগিতা সম্পর্কিত তিনটি নোটও বিনিময় করা হয়। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় কাজ করছেন। আমরা আশা করি বাংলাদেশের জন্য এ দরজা খোলা থাকবে এবং আমাদের দেশের আরও অধিকসংখ্যক তরুণ-তরুণী এখানে কাজ করার সুযোগ পাবেন। মালয়েশিয়ার জনগণ প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুর মতো আচরণ করে। এতে তারা খুব খুশি। তারা অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি এখান থেকে অনেক কিছু শেখে, যা দেশে ফিরে যাওয়ার পর নিজের ব্যবসা দাঁড় করাতে সহায়ক হয়।’

মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে একটা উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন এবং প্রযুক্তি নিয়ে আসুন। আমাদের মানবসম্পদ কাজে লাগিয়ে আপনারা পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারেন। একটা টেকসই অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে বিনিয়োগ ও ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।’ এ সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইবরাহিম বলেন, ‘মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখে। কারণ বাংলাদেশের কর্মীরা এখানে একসঙ্গে কাজ করে মালয়েশিয়ার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এ কারণেই বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা সুবিধা চালু করা হয়েছে, যাতে তারা পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারেন এবং কর্মস্থলে নিরাপদ বোধ করেন।’

তিনি বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছে তা নিয়ে মালয়েশিয়া উদ্বিগ্ন। মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা অবশ্যই একটা বড় বিষয়। একই সঙ্গে দুর্ভোগে থাকা শরণার্থী ও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তাও প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে একটি দল গঠন করে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মিয়ানমার সফর করবেন। এর উদ্দেশ্য হলো সেখানে শান্তি নিশ্চিত করা এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর যে নৃশংসতা চলছে, তার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা।’ এর আগে গতকাল সকালে আনোয়ার ইবরাহিমের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস প্রটোকল জটিলতার আওতায় আটকে পড়া ৮ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিককে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সুযোগ প্রদান এবং মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা চালুর জন্য মালয়েশিয়াকে ধন্যবাদ জানান। প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনার শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে ইতিহাস, ধর্ম ও সাংস্কৃতিক সহানুভূতির ভিত্তিতে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। মানবসম্পদ, বাণিজ্য ও জনগণের পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অনন্য অংশীদার।’

প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইবরাহিম অধ্যাপক ইউনূসকে ‘মালয়েশিয়ার বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করে গত এক বছরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাঁর প্রশংসা করেন। তিনি বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণ, শিক্ষা এবং রোহিঙ্গাসংকট সমাধানে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মালয়েশিয়াকে সরকার-টু-সরকার (জিটুজি) কাঠামোর মাধ্যমে আরও বেশিসংখ্যক দক্ষ বাংলাদেশি পেশাজীবী যেমন চিকিৎসক ও প্রকৌশলী নিয়োগের আহ্বান জানান। উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বোয়েসেল বর্তমানে মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলোর জন্য শ্রমিক নিয়োগ পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করেছে।’ এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশি নিরাপত্তারক্ষী ও সেবাকর্মীদের জন্য সুযোগ দেওয়া এবং মালয়েশিয়ায় অনিয়মিত বা অনিবন্ধিত বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়মিতকরণের পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন; আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান; জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান; প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী; বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন প্রমুখ।

এদিকে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সুযোগ নিয়ে আয়োজিত ব্যবসায়িক ফোরামে দেশটির ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। ফোরামে উপস্থিত ছিলেন সেলুলার অপারেটর রবির প্রধান শেয়ারহোল্ডার আজিয়াটা গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিবেক সুদ, পেট্রোলিয়াম ন্যাশনাল বেরহাদের (পেট্রোনাস) প্রেসিডেন্ট ও গ্রুপ সিইও টেংকু মুহাম্মদ তৌফিক, সার্বভৌম সম্পদ তহবিল খাজানাহ ন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল ফেইসাল ওয়ান জাহির, পাম অয়েল কোম্পানি সাইম ডার্বি প্ল্যান্টেশনস, কুয়ালালামপুর কেপং বেরহাদ (কেএলকে), আইওআই করপোরেশন এবং ফেলদা গ্লোবাল ভেঞ্চারসের (এফজেভি) শীর্ষ কর্মকর্তা, প্রোটন হোল্ডিংস বেরহাদের (প্রোটন) চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়সাল আলবার, গ্লোভ প্রস্তুতকারক টপ গ্লাভ করপোরেশনের নির্বাহী চেয়ারম্যান লিম উই চাই প্রমুখ।

 
Commenti