সড়ক নিরাপত্তা আইন আটকে আছে খসড়াতে

코멘트 · 14 견해

বাংলাদেশে সড়কসংক্রান্ত প্রথম আইন প্রণীত হয় ১৯৮৩ সালে—‘মোটর ভেহিক্যাল অর্ডিন্যান্স’ নামে। পরবর্তীকালে ২০১??

বাংলাদেশে সড়কসংক্রান্ত প্রথম আইন প্রণীত হয় ১৯৮৩ সালে—‘মোটর ভেহিক্যাল অর্ডিন্যান্স’ নামে। পরবর্তীকালে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে কার্যকর হয় ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’। এরপর ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর এ আইনের আওতায় জারি হয় ‘সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২’।

 

 

যদিও আইন ও বিধিমালা প্রণীত হয়েছে, দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমানোর ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ। নতুন আইনে মোট ১২৬টি ধারা রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র দুটি ধারা (৪৪ ও ৪৯) সরাসরি সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করে। ৬২ ধারায় দুর্ঘটনায় আহতকে সহযোগিতা করার কথা বলা হলেও উদ্ধারকারী ব্যক্তির জন্য আইনি সুরক্ষা কতটা নিশ্চিত হবে, তা স্পষ্ট নয়।

 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আইন যথেষ্ট নয়। এখানে নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আইন কমিশন ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি বৈঠকে নতুন করে একটি ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়নের প্রস্তাব আলোচিত হয়েছে।

 

 

সরকার ২০২৪ সালের শুরুতে নয় সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। তাদের কাজ ছিল জাতিসংঘ স্বীকৃত সেফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ ভিত্তিতে একটি আধুনিক আইন খসড়া তৈরি করা। খসড়ায় নিরাপদ সড়ক, যানবাহন, চালক, গতি নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্ঘটনার পর দ্রুত চিকিত্সা সেবার বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু বছরখানেকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো তা খসড়াতেই ফাইলবন্দি হয়ে আছে।

 

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক খসড়া তৈরির কাজ শুরু হয়েছে এবং বিশেষজ্ঞ, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

 

এ ব্যাপারে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর ভাইস চেয়ারম্যান লিটন এরশাদ বলেন, সড়ক নিরাপত্তা আইনে প্রতিটি পরিবহনের যাত্রীর বীমা বাধ্যতামূলক করতে হবে। একটি বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য পরিবহন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করার সময় যাত্রীদের বিমার বিষয়টি বাধ্যতামূলক রাখতে হবে। এছাড়া আহতদের জন্য চিকিত্সা ব্যয় নির্ধারণ করতে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এটা বিআরটিএর অধীন প্রতিটি জেলায় রোড সেফটি কাউন্সিলের সঙ্গে সমন্বয় করে এই কমিটি করা যেতে পারে।

 

তিনি বলেন, সড়ক নিরাপত্তা আইন শুধু প্রণয়ন করলেই হবে না, আইন যেন বাস্তবায়নযোগ্য হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। নতুন আইনে চালকদের দক্ষতা, গাড়ির ফিটনেস ও দুর্নীতির দিকগুলো বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

 

এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, শুধু চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই প্রায় ৩ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রকৃত মৃতের সংখ্যা সরকারি পরিসংখ্যানের তুলনায় অনেক বেশি।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার মানুষ সড়কে প্রাণ হারান। সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, এ সংখ্যা বছরে ২৩ হাজারেরও বেশি।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিকভাবে সড়ক নিরাপত্তা আইন ছাড়া টেকসই সড়ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায় না। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণে ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমার পরিবর্তে বাড়ছে। তাই দ্রুত আইন প্রণয়ন ছাড়া বিকল্প নেই।

 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই)-এর পরিচালক ড. মো. হাদিউল ইসলাম বলেন, বিদ্যমান আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা আছে। সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণীত হলে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে একটি শক্তিশালী কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

 

সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০২৭ সালের মধ্যে নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন কার্যকর করার কথা জানিয়েছে। পাশাপাশি ২০২৬ সালের মধ্যে একটি কেন্দ্রীয় সড়ক দুর্ঘটনা ডেটাবেস চালুর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

 

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) রোড সেফটি শাখার সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, একটি রোড সেফটি অ্যাক্ট প্রণয়নের কাজ চলছে, যার খসড়া প্রস্তুত এবং বর্তমানে রিভিউ চলছে। আশা করা হচ্ছে, এটি কার্যকর হলে সড়ক নিরাপত্তা জোরদার হবে।

 

নতুন আইন কেবল কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবায়নযোগ্য ও আধুনিক হওয়া দরকার এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা। জনমতের চাপ ও সড়কে ক্রমবর্ধমান দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিগগিরই ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ খসড়া প্রস্তাব যাচাই-বাছাই, জনমত জরিপ এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে দ্রুত তা কার্যকরী রূপ দেওয়ার দাবি বিশেষজ্ঞগণের। সময়ক্ষেপণ বন্ধ করে দ্রুত আইন প্রণয়ন ও সঠিকভাবে প্রয়োগ করা এখন জরুরি।

코멘트