চলতি বছরের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেন বাড়তে থাকে। তলানীতে যাওয়া পুঁজিবাজারে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছিলেন, বাজার স্থিতিশীলতার পথে হাঁটছে। এরই মধ্যে ২৮ আগস্ট নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হারানো আস্থা ফিরতে শুরু করে। গতি ফিরে পায় দেশের পুঁজিবাজার। সেপ্টেম্বরের শুরুতেও সূচকের গতি ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে পাঠানো এক চিঠি নতুন করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থেকে গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫০ লাখ টাকা বা তার বেশি মুনাফা করেছে– এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা চেয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে চিঠি দেয় বিএসইসি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্ভাব্য নির্বাচনী তারিখ ঘোষণার পর বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গতি ফিরে আসছিল কিন্তু এনবিআরের চিঠি বাজারে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয়, ৫টি ব্যাংক একীভূতকরণ এবং ৯টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়নের ঘোষণা এবং চলমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে সূচকের টানা পতন ও লেনদেন প্রতিনিয়ত কমতে শুরু করেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১০ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ২৫৫ পয়েন্ট কমেছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫ হাজার ৬৩৬ পয়েন্ট, গত রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সেটা ৫ হাজার ৩৮১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। একই সঙ্গে ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ৭১ পয়েন্ট এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১০৫ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে ১১৫৮ এবং ২০৮৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। শুধু তাই নয়, ৭ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে এক হাজার ৪৪১ কোটি টাকা লেনদেন হলেও ২১ সেপ্টেম্বর সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ৬২১ কোটি টাকায়।
ডিএসইর মতো একই চিত্র দেখা গেছে অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)। ১০ কার্যদিবস আগে সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক ছিল ১৫ হাজার ৭২৪ পয়েন্টে। ২১ সেপ্টেম্বর সিএসইর এই সূচক ৫২৫ পয়েন্ট কমে ১৫ হাজার ১৯৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এই সময়ের মধ্যে সূচকের সঙ্গে সিএসইর লেনদেনও অর্ধেকে নেমেছে। রোববার সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি টাকার।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেওয়ায় শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে গেছে। যার কারণে বাজারে পতন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ৫টি ব্যাংক একীভূতকরণ এবং ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের ঘোষণা বাজারে মন্দা দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ তালিকাভুক্ত ব্যাংকের শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে অবস্থান করছে যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশাও তৈরি করেছে। একই সঙ্গে নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব এবং অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে বলেও মনে করেন তারা।
এব্যাপারে পুঁজিবাজার বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) সভাপতি গোলাম সামদানী ভূইয়া বাংলানিউজকে বলেন, পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন স্বাভাবিক ঘটনা। বেশ কিছুদিন সূচকের টানা উত্থান হয়েছে, এতে প্রায় ডিএসই সার্বিক সূচক ৫০০ পয়েন্টেরও বেশি বেড়েছে। এরপর সূচকের পতন স্বাভাবিক। তবে সম্প্রতি ৫টি ব্যাংক একীভূতকরণ এবং ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের ঘোষণা বাজারে কিছুটা মন্দা দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ তালিকাভুক্ত ব্যাংকের শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে অবস্থান করছে যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। যদিও সরকার থেকে বলা হয়েছে গ্রাহকরা তাদের আমানত ফেরত পাবেন। আমরা আশা করছি এতে করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে, সেটা কেটে যাবে, বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সম্প্রতী এক অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান একীভূত হলে গ্রাহকদের ভোগান্তি হবে না। গ্রাহকরা তাদের আমানত ফেরত পাবেন। তিনি বলেন, গ্রাহকের টাকা যেভাবেই রাখুক, ডিপোজিট রাখুক বা এফডিআর করে রাখুক, এটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সবাই টাকা পাবে। বেশি টাকা থাকলে পেতে হয়তো একটু সময় লাগবে, বলেও তিনি উল্লেখ করেন।